সচরাচর আমরা আমদানি-রপ্তানি এই শব্দগুলো শুনলেও ইনডেন্টিং শব্দটা আমরা খুব একটা শুনি না। কারণ এই শব্দটার খুব বেশি প্রচলন নাই, যদিও আমরা এই ব্যবসা টা সম্পর্কে সবাই কম-বেশি জানি।
ইনডেন্টিং বিজনেস কি? খুব সহজ ভাষায় বললে এই ব্যবসাগুলো হলো কমিশন ভিত্তিক এজেন্ট বিজনেস বা ডিলারশীপ বিজনেস। পৃথিবীর যেকোন দেশের যেকোন কোম্পানির বৈধ এজেন্ট হয়ে এদেশে তার জন্য কাজ করাটাকেই ইনডেন্টিং ব্যবসা বলা হয়। আমার মতে এই ব্যবসা টি খুবই চমৎকার একটা আন্তর্জাতিক ব্যবসা। যে ব্যবসাগুলো করতে আপনার খুব বেশি পুজি বা মিল ফ্যাক্টরি ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র কিছু ব্যবসায়িক কৌশল জানলেই আপনি এই ব্যবসাগুলো খুব সহজে করতে পারবেন।
আমদানি, রপ্তানি এবং ইনডেন্টিং এই ব্যবসাগুলোকে আমি মজা করে কাজিন ব্রাদার্স বিজনেস বলে থাকি। কারণ এই ব্যবসাগুলোর চেহারা ভিন্ন হলেও গোত্র একই। আপনি একটি ব্যবসা খুব ভালোভাবে শিখলেই বাকি ব্যবসাগুলো এমনিতেই করতে পারবেন। কারণ এই প্রত্যেকটা ব্যবসা করার কৌশলগুলো একই।
ইনডেন্টিং ব্যবসা শুরু করার জন্য ডকুমেন্টেশান সমূহঃ
1. ট্রেড লাইসেন্স - ব্যবসার ধরণ, ইনডেন্টিং এজেন্ট।
2. টিন সার্টিফিকেট
3. বিন সার্টিফিকেট
4. ব্যাংক একাউন্ট
5. ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
6. এসোসিয়েশানের মেম্বারশীপ সার্টিফিকেট – BIAA – Bangladesh Indenting Agent Association.
7. আই আর সি - ইনডেন্টিং রেজিষ্ট্রেশান সার্টিফিকেট। - এখন ই আর সি দেওয়া হয়। লেখা থাকে এক্সপোর্ট রেজিষ্ট্রেশান সার্টিফিকেট। পাশে লিখা থাকে ইনডেন্টিং সার্ভিস।
আপনি যে ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে ইনডেন্টিং বিজনেস করতে পারেনঃ
ইনডেন্টিং বিজনেস করার শুরুতেই আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে আপনি কোন সেক্টরে কাজ করবেন। প্রত্যেকটা সেক্টরে কাজের প্রক্রিয়া 70-80% প্রায় একই রকম। তবুও 20-30% ভিন্নতা আছে। এই ভিন্নতা শুধুমাত্র সেক্টরের কারণেই হয়ে থাকে। তাই আগে থেকেই আপনাকে সেক্টর নির্বাচন করতে হবে।
1. কমার্শিয়াল সেক্টর (ফুড, বেবি ফুড, FMCG)
2. ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর
3. মেশিনারিজ
4. ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিস
5. ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিস
এগুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের ফ্রি কোর্সটি দেখতে পারেন।
ইনডেন্টিং ব্যবসার সুবিধা সমূহঃ
1. এই ব্যবসাগুলো করতে আপনার মিল ফ্যাক্টরি ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন হয় না।
2. খুব বেশি ক্যাপিটালের প্রয়োজন হয় না। তবে কিছু ক্যাপিটাল তো অবশ্যই লাগবে।
3. এই ব্যবসাগুলো আপনাকে ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক তৈরীতে সহায়তা করবে।
4. অল্প ইনভেস্টে ভালো মুনাফা করা যায়।
5. লং টাইম সাসটেইনাবল বিজনেস।
6. ইনডেন্টিং ব্যবসায় নতুন নতুন প্রোডাক্টেরও অটো ফ্যাসিলিটি পাওয়া যায়।
7. প্রোডাক্ট নষ্ট হওয়া বা টাকা আটকে থাকার ঝুকি থাকে না।
8. হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া বা উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, এছাড়াও শ্রমিক অসন্তোষ এই ধরনের ব্যাপারগুলো আপনাকে পোহাতে হবে না।
9. জেনারেশান বাই জেনারেশান ব্যবসা করার সুযোগ থাকে।
এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত ইনডেফথ জানতে আমাদের ফ্রি কোর্সটি দেখতে পারেন।
ইনডেন্টিং ব্যবসার কমিশন কেমন হয়?
আগেই বলেছি এটা যেহেতু কমিশন বেসড বিজনেস। তাই এখানে কমিশনের একটা ব্যাপারতো অবশ্যই থাকে। আমার দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি সারা পৃথিবী ব্যাপী কোম্পানিগুলো তাদের এজেন্টদের নরমালি ৩ থেকে ৫% কমিশন দিয়ে থাকে। তবে ইউরোপ বা আমেরিকার কিছু কোম্পানি তাদের এজেন্টদের ৭, ৮ কিংবা ১০% কমিশনও দেয়। এটা অনেক খানি নির্ভর করে আপনার নেগোসিয়েশান, কমিউনিকেশান ও সার্ভিস এর উপর।
বাংলাদেশে ইনডেন্টিং ব্যবসার চিত্র কেমন?
বাংলাদেশে ইনডেন্টিং খুবই জনপ্রিয় এবং প্রচলিত ব্যবসাগুলোর ভিতর একটি। বাংলাদেশে ইনডেন্টিং এজেন্ট আসোসিয়েশান - বিআইএএ এর সূত্র মতে বর্তমান বাংলাদেশে ইনডেন্টিং কোম্পানি আছে ২০০০ এর ও অধিক। যারা সবাই পৃথিবী ব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানির বাংলাদেশী এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এবং এই সংখ্যা প্রতি নিয়তই বাড়ছে।
আশাকরি ইনডেন্টিং ব্যবসা সম্পর্কে আপনাদের একটা সম্যক ধারণা দিতে পেরেছি। আজ তাহলে এ পর্যন্তই, আল্লাহ হাফেজ…